হঠাৎ হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়
আমাদের অতি পরিচিত একটি শারীরিক সমস্যা হলো হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ। বর্তমান সময়ে কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস, ধূমপান, অ্যালকোহল পান এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বা হাই ব্লাড প্রেসার এর রোগী। চিকিৎসকরা জানান, প্রেশার অতিরিক্ত বেড়ে গেলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি কারণ হতে পারে।
হাই প্রেসারের রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের সমস্যা বুঝতে পারেন না। এটি পরবর্তীতে মারাত্মক স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে এক চতুর্থাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এছাড়া পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি ভুগে থাকেন এই সমস্যায়। যখন কোন ব্যক্তি রক্তের চাপ সব সমইয়েই স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে থাকে তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বলা হয়ে থাকে।
ভূমিকা
উচ্চ রক্তচাপ একটি পরিচিত অসুখ যা হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা ঝুঁকি বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশিভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধের প্রয়োজন হয়, তবে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনলে তা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোক সহ কার্ডিওভাসকুলার রোগের একটি প্রধান ঝুকির কারণ। তাই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওষুধ ছাড়ায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায়।
ফল, শাক- সবজি, ডানা শস্য এবং চর্বিযুক্ত দুগ্ধ জাত দ্রব্য সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করতে পারে। ডায়েটারি অ্যাপ্রোচস টু স্টপ হাইপারটেনশন ডায়েট বিশেষভাবে কার্যকর। এই ডায়েটে কলা এবং পালং শাকের মতো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের ওপর জোর দেওয়া হয় এবং সোডিয়াম গ্রহণ কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে পারে। আপনারা সোডিয়াম গ্রহণ সীমাবদ্ধ করুন।
হুট করেই রক্তচাপ বেড়ে গেলে কিভাবে সেটা কন্ট্রোল করা যায়
আমাদের আশেপাশে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগে ভুগছে। এটি খুবই পরিচিত রোগে পরিণত হয়েছে স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপে ভোগলেও তারা সেই সম্পর্কে অবগত থাকেন। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রায় অর্ধেক রোগী জানে না যে তারা এই রোগে ভুগছেন, গবেষণায় উঠে এসেছে এমন সব তথ্য। অথবা জানলেও অনেকে ভুল ধারণা মনে নিয়ে তিনবার করেন। নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এই ঝুঁকি দিন দিন বাড়তেই থাকে। হুট করেই রক্তচাপ বেড়ে গেলে করণীয় কি, সেটাই জানবো আজকের ফিচারে।
ওজন হ্রস এবং কোমর বা পেটের বাড়তি চর্বি কমানোর মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে ফেলা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য কোমরের মাপ যদি ৪০ ইঞ্চির বেশি হয় এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে যদি কোমরের মাপ ৩৫ ইঞ্চির বেশি হয় তবে তারা উচ্চ রক্তচাপে ঝুঁকিতে আছেন বলে ধরা হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে প্রায় পাঁচ থেকে আট মি. মি./ মার্কারি উচ্চ রক্তচাপ কমানো যায়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
রক্তচাপে কি খাবেন, কি খাবেন না
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করবেন কিভাবে, রক্তচাপ বেশি হলে কি খাবেন আর কি খাবেন না চলুন জেনে নিই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার তারেক আহমেদ চৌধুরীর কাছ থেকে।উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কি খাবেন।
- প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় প্রচুর শাকসবজি যেমন পালংশাক, ফুলকপ্ শসা, লাউ, মটরশুট, কলমিশাক, বাঁধাকপ্ টমেটো, কুমড়া, বেগুন ইত্যাদি রাখতে হবে। শাকসবজি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
- প্টাশিয়ামযুক্ত খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কলা, ডাবের পান্ টমেটো ইত্যাদিতে পটাশিয়াম থাকে।
- এক কাপ দুধ খাওয়া যেতে পারে প্রতিদিন।
- তৈলাক্ত মাছ পরিহার করে অন্য ছোট মাছ খেতে হবে।
- এছাড়া ফলমূল যেমন আমলকি, নাশপাত, পেঁপে, বেদানা, পেয়ারা এগুলোর মধ্যে যেকোনো এক ধরনের ফল প্রতিদিন গ্রহণ করা যেতে পারে।
- প্রথমত খাবারের লবণের পরিমাণ কমাতে হবে। কাচা লবণ একেবারে খাওয়া যাবে না। এমন কি রান্না করা খাবারেও লবনের পরিমাণ কমাতে হবে।
- চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। যেমন গরু, খাসির মাংস, মাখন, পেস্ট্রি, কেক ইত্যাদ। কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
- প্যাকেটজাত খাবার বাদ দিতে হবে।
- ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।
- ধূমপান, মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পাঁচটি ঘরোয়া উপায়
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা অনেকেই ভোগেন। রক্তচাপ খুব বেশি বেড়ে গেলে শরীরে নানা রকম জটিলতা তৈরি হতে পারে। যাদের রক্তচাপ অনেক বেশি তাদের অনেক সময়েই নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। অনেক সময়ে সব কিছুর পরেও রক্তচাপ কমানো মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই বেশি বাড়াবাড়ি হওয়ার আগেই বাড়িতে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলার চেষ্টা করুন। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন বেছে নিন। হয়তো অনেকটাই সমস্যা কমতে পারে। যেমনঃ
- রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলুন ।ময়দা চিনি কেক টেকি সাদা ভাত সাদা পাউরুটি বার্গার ইত্যাদি খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। এমনকি আটার রুটির বদলে জোয়ার বাজরা রাগের রুটি খেতে পারেন। সাধারণ ইডলি ধোসার বদলে সুজি বা রাগিরি ইডলি খান।হোল হুইট গ্রেনের আটা পাউরুটি খান। ওজন যত নিয়ন্ত্রণে রাখবেন তত রক্তচাপও কম থাকবেন।
- ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই নিয়মিত শরীরচর্চাও প্রয়োজন। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের প্রত্যেকদিন অন্তত 30 থেকে 40 মিনিট শরীরচর্চা করা আবশ্যিক। যত কার্ডিয়ো করবেন, তত রক্ত চলাচল বেশি হবে, তত হৃদ্যন্ত্র সুস্থ থাকবে। কোন রকম দীর্ঘ অসুখ বা হৃদরোগের আশঙ্কা কমবে। ত্রিশ মিনিট ব্রিস্ক ওয়াক বা জগিংয়ে উপকার পাবেন।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে প্রত্যেক দিন ৫ গ্রামের বেশি নুন বা কাঁচা লবণ খাওয়া উচিত নয়। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তাদের আরো লবণ চলবে না। বিশেষ করে আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না বাইরের জাঙ্ক ফুড বা বিস্কুট চানাচুরেও কতটা লবণ থাকে। তাই যে কোন বাইরের খাবার খাওয়ার আগে সাবধান হই।
- পটাশিয়াম বেশি যেতে হবে শরীরে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য পটাশিয়াম অত্যন্ত জরুরি পুষ্টি। তাই কলা, অ্যাভোকাডো, টমেটো, রাঙা আলু, শ্যামল মাছ,টুনা মাছ, বাদাম, দুইয়ের মত খাবার নিত্য খাদ্য তালিকায় রাখুন।
- ধূমপান, মদ্যপান অবশ্যই কমিয়ে ফেলুন। ধূমপান ছেড়ে দিন। গবেষণা বলছে অ্যালকোহল প্রায় ১৬ শতাংশ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। নিকোটিনও আমাদের রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি করে। একটি স্বাস্থ্যকর জীবন বেছে নিন, তাহলে ধীরে ধীরে নিজে থেকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, পানি খাওয়া এবং মানসিক চাপ কম করলে শরীরের অনেক সমস্যা কমে যেতে পারে।
হাই থেকে নরমালে নামাতে চান প্রেসার? এই পাঁচটি ঘরোয়া টিপস জেনে নিন
হাই ব্লাড প্রেসার অসুখটি নিয়ে প্রথমে সচেতন হওয়া জরুরি। নইলে স্টোক, হার্ট অ্যাটাক, চোখের সমস্যার মটো একাধিক গুরুতর রোগ দেহে বাসা বাঁধতে পারে।তাই ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন এর শুভক্ষণে সকলকেই এই অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখার অঙ্গীকার করতে হবে। আসলে আমাদের রক্তবাহীন নালীর ভেতর থেকে প্রবাহিত হয় রক্ত। এক্ষেত্রে রক্ত প্রবাহের সময় রক্তবাহী নালীর ভেতরের দেওয়ালে যে চাপ পড়ে, তাকে বলা হয় ব্লাড প্রেসার।
মনে রাখবেন, সকলেরই ব্লাড প্রেসার রয়েছে। তবে তা স্বাভাবিকের গুন্ডি পেরিয়ে গেলেই হাই ব্লাড প্রেসার বলে ধরা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আমাদের স্বাভাবিক ব্লাড প্রেসার হলো ১২০/৮০ এম এস এইচ জি। তবে কোন কারনে রক্তচা.১৪০/৯০ এর ওপরে গেলেই চিন্তার বিষয়। এটাই হাই ব্লাড প্রেসার এর মানদন্ড।
মুশকিল হলো, এক গন্ডা ঔষধ খাওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রে প্রেশার নিয়ন্ত্রণে আসে না সেক্ষেত্রে কিছু ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি এই কয়েকটি ঘরোয়া টোটকা মেনে চললে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। যেমনঃ
- ওজন কমালে প্রেসার থাকবে নরমাল
- শরীর চর্চা করলে প্রেসার থাকবে নরমাল
- লবণ জাতীয় খাবার খেলে প্রেসার থাকবে নরমাল
- শান্তিমত ঘুমালে প্রেশার থাকবে নরমাল
- দুশ্চিন্তা দূর করলে প্রেসার থাকবে নরমাল
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য জরুরী ভিটামিন ডি
বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ রক্তচাপে রোগীদের ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়া অবশ্যক। বিশেষত্ব, ভিটামিন- ডি অবশ্যক। এটি রক্তনালীর আস্তরণকে স্বাভাবিক করে তোলে। কলা, মোচ্ থোর সহ কয়েকটি সাধারণ খাবার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখলেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আজকাল অনেকেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছে। কেবল বয়স্ক বা ফ্যাটি চেহারার লোকেরাই নয়, অল্পবয়সী এবং রোগা পাতলা চেহারার লোকেরাও এই সমস্যার শিকার।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকা,অতিরিক্ত জাংশ উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ।এই সমস্যা মেটাতে খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়া অবশ্যক। বিশেষত্ব, ভিটামিন ডি অবশ্যক। একটি রক্তনালীর আস্তরণকে স্বাভাবিক করে তোলে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা আলু,পালংশাক সহ সবুজ সবজি, মটরশুঁটি,দানাশস্য,লেবু এবংদুগ্ধজাত দ্রব্য খেতে পারেন।
বিশেষত্ব, পালংশাক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে খুব উপকারী মোচা,থোর এবং কলা। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা প্রতিদিন পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এগুলি খেলে উপকার পাবেন। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। ঘুমের অভাবে স্ট্রেস হরমোন বাড়তে পারে। তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত চেকাপ করানো জরুরী। রক্তচাপের মাত্রা অতিরিক্ত থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খান। ওষুধ না খেলে উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্টোক পর্যন্ত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা জাঙ্ক ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস থেকে অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।অতিরিক্ত ধূমপানো রক্তচাপ বাড়ার একটি কারণ।
লেখক এর মন্তব্য
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটি পড়ে এতক্ষণ অবশ্যই বুঝতে পারলেন যে কি খেলে বা কি কি করলে হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। আপনার যদি হাই প্রেসার থেকে থাকে বা আপনার পরিবারের কারো যদি হাই প্রেসার থেকে থাকে অবশ্যই এই নিয়মগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন। এবং আমার আর্টিকেলটি যদি আপনার এতটুকু ভালো লেগে থাকে তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন আর আমার ওয়েবসাইটটির সাথে থাকবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url