জরায়ু ক্যান্সারের টিকা কখন দিতে হয়-জরায়ুর টিকা দেওয়ার নিয়ম

জরায়ুর মুখে ক্যান্সার একটি খুব মারাত্মক সমস্যা যা আজকাল দিনে মেয়েদের খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। এই সমস্য থেকে সমাধান পেতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং এই বিষয়ে জানতে হবে আমাদের সবার অবশ্যই জানার অনেক দরকার।
জরায়ু ক্যান্সারের টিকা কখন দিতে হয়

আর জরায়ুর মুখে ক্যান্সারের তথ্যটি জানার জন্য আর্টিকেলটি ক্লিক করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন জরায়ুর মুখে ক্যান্সারের করনীয় কি। তাই আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পরার অনুরোধ করা হল। সূচিপত্র 

জরায়ু ক্যান্সারের টিকা দেওয়ার নিয়ম  

জরায়ু ক্যান্সার নারীদের জন্য একটি মারাত্মক রোগ যা সাধারণত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। জরায়ুতে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের ফলে এবং এই ভাইরাসটি শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়।

জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় সরাসরি HPV ভাইরাসের কয়েকটি ধরন, বিশেষ করে HPV ১৬ এবং ১৮। এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বর্তমানে HPV ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি টিকা এইচপিভি ভ্যাকসিন উপলব্ধ, যা এই ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যেমনঃ 
  • জরায়ু ক্যান্সারের টিকার গুরুত্বঃ HPV টিকাকে জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধের একটি কার্যকর উপায় হিসেবে পরিগণিত করে প্রধানত নারীদের জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু HPV টিকা নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য উপকারী। 
  • টিকা দেওয়ার সঠিক সময়ঃ সাধারণত ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের দেওয়া হয় HPV টিকা। দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করের জন্য টিকাটি আরও ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে কারন এই বয়সে শরীরের ইমিউন সিস্টেম খুব ভালো থাকে। 
  • টিকা দেওয়ার পদ্ধতিঃ HPV টিকা সাধারণত তিনটি ডোজে দেওয়া হয় যেকোনো সময় দেওয়া যেতে পারে। প্রথম ডোজ দেওয়ার, ২ মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং প্রথম ডোজ দেওয়ার ৬ মাস পর তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়। এই তিনটি ডোজ সঠিকভাবে নেওয়া হলে, ৮০%-৯০% পর্যন্ত নিরাপদ এবং কার্যকর, এবং দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করে। 

জরায়ু ক্যান্সারের টিকা নিবন্ধন 

নারীদের জরায়ু মুখে ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ায় করার জন্য এক ডোজ টিকাই যথেষ্ট। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে চালু হতে যাচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা ক্যাম্পে। এই কর্মসূচির আওতায় ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের বিনামূল্যে এই টিকা দেওয়া হবে অর্থাৎ পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েশিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে এক ডোজ করে টিকা পাবে। 
জরায়ু ক্যান্সারের টিকা কখন দিতে হয়

এই টিকা নিতে হলে আগে জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে ১৭ ডিজিটের অনলাইন নিবন্ধন করতে:https://vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটে যেতে হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রাণঘাতী জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধী এইচপিভি টিকা অত্যন্ত কার্যকর ও নিরাপদ এই কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 
আরও ২০ লাখ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে আগামী নভেম্বর মাসে আরও জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৫ থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ১০ কর্মদিবস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এইচপিভি কার্যক্রম শেষ করা হবে। স্কুলের বাইরে এলাকায় এলাকায় টিকা দেওয়া হবে ৪ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ ৮ কর্মদিবস থেকে। 

জরায়ু ক্যান্সারের টিকা কোথায় দেওয়া হয়  

বাংলাদেশে, সরকারী এবং বেসরকারী হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ক্লিনিকে জরায়ু মুখে ক্যান্সারের টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সী যে কোন কিশোরী নিতে পারবে জরায়ু মুখে ক্যান্সারের টিকা সে ক্ষেত্রে দুটি ডোজ টিকা নিতে হবে কারণ তাদের শরীরের ৯০% প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশি ডেভ্লপ করবে। 

তবে, ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত এই টিকা দেওয়া যেতে পারে,মহিলাদের জন্যও বিশেষত যদি তারা এখনও HPV ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত না হয়ে থাকেন। তিনটি ডোজ নিতে হবে যাদের বয়স ৪৫ বছর হয়েছে তারা প্রথম ডোজ যেদিন দেবে ঠিক তার এক মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ এবং তার ৬ মাস পরে তৃতীয় ডোজ নিতে হবে।আশা করছি আপনি বুঝতে পেরে গেছেন জরায়ু মুখের ক্যান্সার কোথায় দেওয়া হয়। 

জরায়ু মুখের ক্যান্সারের টিকার দাম বাংলাদেশ  

জরায়ু মুখের ক্যান্সারের টিকার দাম বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে তবে বাংলাদেশে HPV টিকার দাম বেশ বৈচিত্র্যময়। সাধারণভাবে, HPV টিকার দাম তিনটি ডোজের উপর নিতে পারে আবার ডোজ প্রতি নিতে পারে তবে এটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন হতে পারে। যেমনঃ 
  • বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকঃ HPV টিকার দাম বেশিরভাগ সময় একটু বেশি বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতি ডোজে সাধারণত ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা হতে পারে। তিনটি ডোজ নেওয়া হয় সুতরাং যার ফলে মোট খরচ ৯,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। 
  • সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রঃ কিছু সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে HPV টিকার দাম তুলনামূলকভাবে কম। সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফ্রি বা ভর্তুকি মূল্যে টিকা দেওয়ার জন্য ভর্তুকি পাওয়া যায়। সরকারী উদ্যোগের মাধ্যমে HPV টিকা দেওয়া হচ্ছে কিছু এলাকায় স্কুলছাত্রীদের বিনামূল্যে। তবে আবার কিছু ক্ষেত্রে এক ডোজের দাম ১,০০০ থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সরকার বিনামূল্যে বা কম খরচে HPV টিকা দেওয়ার কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে। 
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাঃ যেহেতু সরকার কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা HPV টিকার ফ্রি বা কম খরচে সরবরাহ করা হয় যেমন এক্সটেনডেড স্বাস্থ্য ক্যাম্পে ফ্রি টিকা বিভিন্ন এনজিও এবং স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে প্রদান করা হতে পারে। 

জরায়ু ক্যান্সারের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া  

 HPV (Human Papillomavirus) ভ্যাকসিন হলো জরায়ু মুখে ক্যান্সারের প্রতিরোধে ব্যবহৃত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টিকা ই ভাইরাস জরায়ু মুখে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কারণ এটি মূলত মহিলাদের জরায়ু মুখে ক্যান্সার, অ্যানাল ক্যান্সার, থ্রোট ক্যান্সার এবং অন্যান্য HPV-সম্পর্কিত ক্যান্সারের প্রতিরোধে কার্যকর। 
জরায়ু ক্যান্সারের টিকা কখন দিতে হয়

এটি অনেক ধরনের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এবং HPV একটি ভাইরাস যা যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত ৯ থেকে ২৬ বছর বয়সী মেয়েদের HPV টিকা দেওয়া হয় কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ছেলেদেরও দেওয়া হয়। যদিও এই টিকা বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ, তবুও যেকোনো টিকার মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে HPV টিকারও। যেমনঃ

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ  

প্রথমত, HPV ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকটাই মৃদু এবং স্বল্পস্থায়ী হয়। সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি হলঃ 
  • ইনজেকশন সাইটে ব্যথাঃ টিকা দেওয়ার স্থানে কিছু সময়ের জন্য ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।২ লালভাব ও ফোলাভাবঃ টিকা দেওয়ার জায়গায় লাল হয়ে যাওয়া বা সামান্য ফোলাভাব হতে পারে। 
  • হালকা জ্বরঃ কিছু মানুষের শরীরে টিকা নেওয়ার পর কিছু মানুষ হালকা জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। যা সাধারণত এক থেকে দুই দিনের মধ্যে চলে যায়। 
  • মাথাব্যথাঃ টিকা গ্রহণের পর মাথা ব্যথা একটি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। 

শারীরিক দুর্বলতা বা ক্লান্তিঃ  

কিছু মানুষ শারীরিক দুর্বলতার বা ক্লান্তি অনুভূতি পেতে পারেন টিকা নেওয়ার পর। টি বেশিরভাগ সময় অস্থায়ী এবং ১-২ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। 

মাথা ব্যথাঃ  

মাথাব্যথাও একটি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া HPV টিকার। তবে এটি খুবই হালকা এবং কিছু সময় পর সেরে যায়। 

ভ্যাকসিন গ্রহণের পর সতর্কতাঃ  

এই ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত কারণ যারা আগে কোনো টিকার প্রতি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাদের জন্য। এই অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত টিকা দেওয়ার আগে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যদি গর্ভবতী মহিলাদের HPV টিকা গ্রহণের পূর্বে সাধারণভাবে গর্ভাবস্থায় এই টিকা নেওয়ার পর কোনো সমস্য দেখা দেয়নি। 

লেখকের মন্তব্য

 প্রিয় পাঠক আশা করি জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়াও কিভাবে জরায়ু ক্যান্সারের ভ্যাকসিন দেবেন সে সম্পর্কেও বিস্তারিত অবগত হয়েছে। তবে আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের উপরিক্ত নিয়মগুলো মেনে সতর্ক হয়ে টিকা দিবে। 

এতক্ষণ আপনাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আমার সাথে থাকার জন্য আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। এরকম আরো তথ্যবহুল বা আপনার উপকারে আসে এমন আর্টিকেল পেতে অরোরা ব্লকের সাথে থাকুন। নিজের ভালো থাকুন অন্যকে ভালো রাখুন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url